Saturday 20 November 2021

#গল্প৩ #কলকাতাথেকেকাশ্মীর #3idiots

 #গল্প৩ #কলকাতাথেকেকাশ্মীর #3idiots পাঞ্জাব নিয়ে ছেলেবেলা থেকে একটা অদ্ভুত আকর্ষণ আছে! একটা কারণ নেই, কারণ বহুবিধ। আগেই বলেছি, কলকাতা থেকে ২৩০ কিমি দূরে একটা ছোট্ট শহরে আমার জন্ম। নরেন্দ্র পুর এ ক্লাস ফাইভ এ যখন পড়তে গেছি, কলকাতার বন্ধুরা গ্রাম বললে খুব রেগে যেতাম! থাম তো! কতদিনের পুরানো শহর জানিস? নবাব দের আমলে অবিভক্ত বাংলার রাজধানী আমার বাড়ি থেকে ১১ কিমি দূরে। রাজধানীর পাশে, বাণিজ্যের এলাকা ওটা। শহর জুড়ে অনেক পুরনো পুরনো জমিদার বাড়ি। গঙ্গা, আমরা বলি ভাগীরথী, উত্তর ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যের প্রধান পথ। তখন কলকাতা কোথায়? স্কুলের পর প্রথম যখন গড়িয়া তে বাসা ভাড়া করলাম, এক কামড়া ঘর, রান্নাঘর আর ডাইনিং। বাড়ির মালিক বাঙাল, পুরো পাড়াটাই তাই। দেশ ভাগের পর উদ্বাস্তু হয়ে এসে, প্রায় বলা যায়, জঙ্গল পরিষ্কার করে আসতে আসতে ঘর বাড়ি বানিয়েছেন। আমরা ইতিহাসের খেয়ালে এদেশেই পড়েছি। তখন মনে হত, ইংরেজ যদি ভারতে না আসতো, তাহলে আমার বন্ধুদের আমার জন্মস্থানের আসে পাশে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতে হত!

আমার বড়-বাবা ( ঠাকুমার বাবা) মন্মথ নাথ সাহা সেই সব পুরনো জমিদারদের একজন। ঠাকুমা একমাত্র মেয়ে। পুরনো গল্পের বই এ ঠিক যেমন থাকে, জমিদার এর একমাত্র মেয়ের বিয়ে হয় কোনো উকিলবাবুর সাথে, তিনি ঘর জামাই হয়ে এস্টেট দেখাশোনা করেন, এখানেও ঠিক তাই। ঠাকুরদা উকিলমশাই। খুব কম বয়সে মারা যান, আমার বাবা তখন খুবই ছোট।
বাবার গল্পে, বড়-বাবা পিতৃ সম। আমিও দাদুই বলি। দাদুর ছিল রেশমের ব্যবসা। তখন ওখানকার মসলিন খুব বিখ্যাত, ছুঁচ দিয়ে গলে যায় নাকি একটা কাপড়। ব্যবসা থেকে জমিদারি। জমি শহরের বাইরে। জমিদাররা শহরে থাকতেন, জমিদারি ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকত নানা জায়গায়।
একটা প্রকান্ড বাড়িতে বাবা, দুই জেঠু, আর ঠাকুমা। মোটামুটি তিনটে পরিবার একসাথে। বাড়ির সামনে একই আকারের আরেকটা প্রকান্ড বাড়ি। একতলা থেকে তিনতলা অব্দি পিলার উঠে গেছে, দোতলার চারিদিকে খিলানের মত বারান্দা। ওটার নাম কাছারি বাড়ি। ওখানে খাজনা জমা পড়ত। আর বছরে একবার বিরাট করে কার্তিক পূজা হত।
শহরটা একটা মিনি ইন্ডিয়া। নবাবী আমলের বাণিজ্য স্থান। জৈন্য শিখ মারোয়ারি সব রকম মানুষ আছেন শত শত বছর ধরে, তাদের নানাবিধ ব্যবসা। আমরা বলি, জৈন্য এর দোকান, পাঞ্জাবির দোকান ইত্যাদি ইত্যাদি।
দাদু জমিদার, তাই তার বন্ধু বান্ধব আত্মীয় স্বজনের মধ্যে অনেক জমিদার। সারা শহর জুড়ে তাদের বানানো মন্দির, রাধা কৃষ্ণের, দুর্গার। তাদের মধ্যে যারা সব থেকে বড়, তাদের উপাধি রাজা। তারা বেশ কিছু স্কুল কলেজ ও বানিয়েছেন। কাছারি বাড়ির অনেক কটা গল্পের মধ্যে সেরা গল্প, ওখানে নেতাজী এসে থেকেছেন এক রাত।
যখন নরেন্দ্রপুর এ এসে ভর্তি হলাম, আমি একটু অন্যদের থেকে ছোটখাটো। একদম শোষিত নিপীড়িত প্রজাতি তে ছিলাম প্রথম বছরটা। কারণ ওই যে, নার্সারি স্কুল ইংলিশ মিডিয়াম, কম বয়সে ভর্তি হয়েছি স্কুল এ। যখন নিজের শহরের গল্প করতাম, স্বাভাবিক সবাই হাসতো! একদিন সম্ভবত ইতিহাস ক্লাস এ জমিদার নিয়ে জিগ্গেস করা হলো, কারো বাড়িতে কেও ছিলেন কিনা। উনি স্বল্পমেয়াদি শিক্ষ্ক ছিলেন, কিছু বাছাই করা ক্লাস নিতেন। (আমাদের টিচার স্টুডেন্ট রেশিও ১:২৫, এক সাবজেক্ট মাল্টিপল টিচার পড়াতেন)। ওনার নাম মনে নেই, বন্ধুরা নিশ্চয় মনে করিয়ে দেবে (স্মৃতির অভাবে জুলফি বাবু বলছি।) যেটা মনে আছে, জুলফি ধরে টানা। প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারলে জুলফি টান, ক্লাসে কথা বললে টান। আমি হামেশাই সেই টান খেতাম। সেদিন সাহস করে হাত তুলে বললাম, আর যথারীতি এক বন্ধু হাহা করে হাসলো! আমি রেডি জুলফি-টান খেতে এবার, দেখি উনি প্রবল রেগে যে হাসলো তাকে বকে দিলেন, সঙ্গে জুলফি-টান। ইয়ার্কি হচ্ছে জমিদার নিয়ে, জানো জমিদার কি জিনিস!! সেই প্রথম একটা সিচুয়েশন এ মার টা আমি না খেয়ে অন্য কেও খেল!
যাইহোক, আমার মিনি ইন্ডিয়া তে সব ধর্মের মন্দির আছে, পাঞ্জাবি শিখ এবং গুরুদুয়ারাও।
দ্বিতীয় কারণ দেশ ভাগের গল্প এবং ইতিহাস। ট্রেন এ করে ইন্ডিয়া আসার গল্প, স্বাধীনতা সংগ্রাম, শিখ সাম্রাজ্য, সবুজ বিপ্লব, ইতিহাসের পরতে পরতে পাঞ্জাব।
তৃতীয় কারণ, সিমরান! ওই যে সর্ষে ক্ষেত, সিমরান মানে কাজলের দৌড়ে আসা! বিস্তৃত আখের ক্ষেত। কলেজ এ আমার একমাত্র পাঞ্জাবি বান্ধবীকে বার বার বলতাম, তোর বিয়েতে নেমন্তন্ন করিস, আমি পাঞ্জাব যাব!
সেই পাঞ্জাব পৌঁছে গেলাম চালিয়ে চালিয়ে! সারা পাঞ্জাব জুড়ে গাড়িতে প্রায় লুপে 'আজাদী' শুনতে শুনতে! পাঞ্জাব মানে আমার কাছে স্বাধীনতা! এই স্বাধীনতা সব ধরনের শোষন বঞ্চনার থেকে, এই স্বাধীনতা মুঘলের থেকে, ইংরেজের থেকে, হীরক রাজার থেকে, বিদেশি শত্রুর থেকে, দারিদ্রের থেকে!
গ্রামে থেকে চাষ করে ভালো থাকা যায়, পাঞ্জাব দেখিয়েছে। আমিও কোন একদিন চাষী হতে চেয়েছিলাম, হবো হয়তো কোনো একদিন।
পাঞ্জাবের মধ্যে দিয়ে গিয়েও আমরা পাঞ্জাবে থেকেছি খুব কম, কারণ তখন প্রায় সেকেন্ড ওয়েভ শুরু হয়ে গেছে। কাশ্মীর থেকে ফেরার পথে অমৃতসর স্বর্ণ মন্দির টাও সেই কারণে যাওয়া হয় নি।
কিন্তু সারাটা পথ স্বাধীনতার গান আর কৃষক আন্দোলনের ট্রাক্টরের সঙ্গে গাড়ি চালানো! মনে হচ্ছিল একটা ঐতিহাসিক মুহূর্তের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি! এতো অর্গানাইজড আন্দোলন কোনোদিন দেখি নি! শেখার আছে অনেক কিছু!! গ্রাম থেকে ট্রাক্টর, গাড়ি ভরে দিল্লি যাচ্ছে, প্রতিটা গাড়িতে ফ্ল্যাগ লাগানো! প্রত্যেকটা টোল গেটে টোল নেওয়া বন্ধ, কোনো টোলই নেই। টোল গেট এর পাশে জলসত্র আর খাবারের ব্যবস্থা। গাড়ি থামাও, সবাই খাওয়া দাওয়া করে নাও। মার্সিডিজ এর ডিকি খুলে খিচুড়ি আর জল খাওয়াচ্ছেন, সম্পন্ন পাঞ্জাবি। আন্দোলনে এটাই তাদের সেবা! পেট্রোল পাম্প ঠিক করা আছে, তেল ভরে নাও, বিলিং এর ব্যবস্থা করা।
দিল্লী গিয়ে ওনাদের সাথে একদিন বসতে চেয়েছিলাম। ঠিক যে কারনে অমৃতসর থাকার রিস্ক নিইনি, সেই কারণে দিল্লী ঢুকি নি!
বড় ভয়, ভয়ে লিখি না। চাকরি করে খেতে হয়। বেশি লিখে ফেললে কে জানে ভবিষ্যতে কোথায় কি ধরনের প্রতিক্রিয়ার শিকার হব!
যখন থাকতে পারি না, টুক করে রাতে লিখে আবার ডিলিট মেরে দিই! কেও পড়বে বলে লিখি না, নিজের শান্তির জন্য লিখি। আমি স্বাধীন নই, পাতি বুর্জোয়া, বড় বুর্জোয়াদের আরো বড় করে তুলি! ফারহানের মত সব ছেড়ে ক্যামেরা বা কলম ধরে কাটিয়ে দিতে পারি না, ক্যামেরা কলম দুই-ই ছেড়ে আমায় এক্সেল আর পাওয়ার পয়েন্ট খুলতে হয়। কিন্তু এখন ভয়টা একটু কমেছে! ওই যে বললাম, প্যান-ডেমিক এপিফ্যানি! Video Link: https://www.facebook.com/avradip.saha/videos/205959981684418
নোট: ভিডিওটি সৃজনীর তোলা, আমার পাশে বসে পাঞ্জাবে। আমরা সব দায়িত্ব ভাগ করে নিয়েছি। যেমন ঘর ঝাঁট আমার, মোছা ওর; বিছানা ঝাড়া আমার, ওয়াশিং মেশিন ওর; ইলেকট্রনিকস অর্ডার আমার, সুইগি ওর; পুঁজিবাদ আমার, সমাজ আর বিপ্লব ওর!

No comments:

Post a Comment