Saturday 20 November 2021

#গল্প২ #3idiots

 #গল্প২ #3idiots

থ্রি ইডিয়টস্ সিনেমাটা যখন দেখলাম খুব অবাক হয়ে গেলাম! একি রে বাবা! ফারহান খুরেশীর গল্পটা তো আমার কপি!
ছোট থেকেই পড়ার বই ছাড়া বাকি সব কিছু পড়তে ভালোবাসি! গল্প পড়ব বলে একচুয়ালি পড়তে শিখেছি, মায়ের কাছে হাত-পাখার মারের ভয়ে না!
মার যদিও অনেক খেয়েছি, সেটা অন্য গল্প!
তখন একটা কো-এড ইংলিশ মিডিয়াম প্রাইমারি স্কুল এ পড়ি।
ক্লাস ফোর এর আগে বাবার রবীন্দ্র রচনাবলী পুরো কমপ্লিট করেছি! ঠাকুমার শরত রচনাবলী লুকিয়ে পড়তে হত, ওগুলো নাকি বড়দের বই!
দাদাদের পুরনো কমিকস, আনন্দমেলা তো কথাই নেই! সব গোগ্রাসে শেষ!
বাড়ির দুই তিন প্রজন্মের সব বই শেষ করে অবশেষে লাইব্রেরী কার্ড করে নিলাম। বঙ্কিম চন্দ্র শেষ হয়ে গেলো চটপট!
-প্রাইমারী স্কুল শেষ হতে চললো।
স্কুল-এর সব থেকে বন্ধু, আর ছোটবেলার খেলার সঙ্গী বলতে মনীষা, তান্নি, প্রিন্স, গৌরব।
খুব মন খারাপ। ছাদে বসে আছি বাবার সঙ্গে। রোজ সন্ধ্যা বেলায় যেমন বসি। হাজার হাজার প্রশ্ন করি, বাবা উত্তর দিতে থাকেন, যেমন গ্যালাক্সি, তারাদের সাইজ, সূর্যের তেজ, ইত্যাদি ইত্যাদি।
সেদিন বললাম, আমার বন্ধুরা যেখানে পড়বে আমি সেখানে পড়ব।
তা তো হয় না!
মনীষা, তান্নি; গার্লস স্কুল এ ভর্তি হবে। আমরা বয়েজ স্কুল এ।
প্রাইমারী এর পর আমার ছোট্ট শহরে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলই নেই।
বন্ধুদের সঙ্গে পড়া হবে না যখন, তখন আর কোথায় পড়ব কি যায় আসে। জিজ্ঞেস করলাম, সব থেকে ভালো স্কুল কি?
বাবা বললো, দুন স্কুল খুব নাম করা, রাজীব গান্ধী পড়েছে!
আমি বললাম, তাহলে ওখানেই পড়ি! বাবা হাসলো! ওখানে মন্ত্রী-সান্ত্রির ছেলেরা পড়ে। তারপর গল্প শোনালো, কোনো একদিন ট্রেনিং এ গেছিলেন, সেখানে থরে থরে খাবার সাজানো থাকে বুফে সিস্টেম এ!
বুঝলাম, ওটা ইয়া-ইয়া বড়লোকদের স্কুল!
আমার দ্বিতীয় প্রশ্ন, তাহলে আমি পড়তে পারি এমন রাজ্যের সব থেকে ভালো স্কুল কি? বাবা বললো, নরেন্দ্রপুর - পুরুলিয়া - রহড়া।
তাহলে আমি ওখানেই পড়ব!
ফাইনাল!
বাবা হেসে ফেললো, ওখানে অ্যাডমিশন টেস্ট দিতে হয়। তখন দুই-তিন মাস বাকি। দাদা ক্লাস এইট্ থেকে রহড়া তে পড়ে।
দাদা পড়েছিল এক স্যারের কাছে, লম্বা দাড়ি, কালীদাস বাবু!
কালীদাস বাবু ২ ঘণ্টা ট্রেন জার্নি করে আমাদের ছোট্ট শহরে এসে, শুধু আমাকে পড়াতেন। বাবার বন্ধু, দাদাকে পড়িয়েছেন, সেই সূত্রে। মূলত হলস্ এর বই থেকে অঙ্ক করাতেন। আর নানান রকম ইংলিশ লিখতে দিতেন।
কালীদাস বাবু কি পড়িয়েছেন তার থেকেও বেশি আমার মনে আছে, উনি দুটো ডিম সেদ্ধ খেতেন আর ডিমের কুসুম ওনার দেড়-হাত লম্বা দাড়িতে লেগে যেত!
নরেন্দ্রপুর-এ পরীক্ষা দিতে প্রথমবার কলকাতা এলাম! শিয়ালদা স্টেশন্ এ সজোড়ে বাবার হাত ধরে ছিলাম, ছাড়লেই হারিয়ে যাবো! টালিগঞ্জে এক দূর সম্পর্কের দাদুর বাড়িতে উঠলাম। রাতে, "গুপী গায়েন বাঘা বায়েন", টিভিতে, রাত একটা অব্দি সিনেমা দেখে পরদিন পরীক্ষা দিলাম। বাবা বারণ করেন নি, কোনোদিন আমাকে কেও পড়তে বলতো না। আর এই পরীক্ষা তো নেহাতই খেলা, ছেলের সখ মেটানো গোছের!
বাড়িতে কেও ভাবে নি আমি নরেন্দ্রপুর এ চান্স পাবো। ৬-৭ ঘণ্টার ট্রেন জার্নি। গিয়ে রেজাল্ট দেখতেও বাবাকে সারাদিন ট্রেন এ করে যেতে-আসতে হবে। আরেকজন চেনা পরিচিত উকিলবাবু গেছিলেন, বাবা তাকে বলে দিলেন দেখে আসতে। ওনার ছেলেও দিয়েছিল পরীক্ষাটা। উনি এসে জানালেন, "দেখলাম না।"
বেশ কিছুদিন অপেক্ষা করে, বাবার মনে হলো, নিজে গিয়ে একবার দেখে আসি। ভোর চারটের ট্রেন এ বেড়িয়ে রাত ১১টায় ফিরলেন বাবা।
হাতে মিষ্টির প্যাকেট! আমি দোতলার ব্যালকনি তে দাঁড়িয়ে। বাবা চিৎকার করছেন, "এক্ষুনি প্যাকিং করতে হবে। কাল ভর্তির লাস্ট ডেট!"
আবার আমাদের ভোর চারটের ট্রেন ধরতে হবে!
"A" দিয়ে নাম, আমার নাম একদম লিস্ট এর উপরের দিকেই ছিল। দূর থেকে দেখা যাচ্ছে সবার মাথা ছাড়িয়ে।
অথচ উকিলবাবু বেমালুম মিথ্যা কথা বলেছিলেন আমার বাবাকে।
ওনার বাড়ির মাঠে আমি ফুটবল খেলতাম, ওনার ছেলের সাথে আমি ক্লাব বানিয়েছিলাম, নাম দিয়েছিলাম "সবুজ সংঘ"।
শেষ দিন, হ্যাঁ, এক্কেবারে শেষ দিনে গিয়ে আমি ভর্তি হলাম!
সারারাত না ঘুমিয়ে, ৬-৭ ঘণ্টা ট্রেন জার্নি করে।
১০ বছর বয়স, ক্লাস ফাইভ। গোটা রাজ্যে এর থেকে বড় ক্যাম্পাস, বোধহয় সব মিলিয়েও খুব কম আছে।
শুরু হলো নতুন অধ্যায়। আর একটু একটু করে ঢুকে পড়লাম আমি ফারহান খুরেশীর জীবনে!
মনীষার সাথে আমার আর কোনোদিন দেখা হয় নি। তান্নি কে একবার দেখেছি; প্রিন্স, গৌরব-কেও বার কয়েক। ফেসবুক জীবনে আসার পর মনীষা আর তান্নি কে অনেক খুঁজেছি, খুঁজে পাই নি।
ক্রমশ...

No comments:

Post a Comment