Saturday 20 November 2021

#গল্প৩ #কলকাতাথেকেকাশ্মীর #3idiots

 #গল্প৩ #কলকাতাথেকেকাশ্মীর #3idiots পাঞ্জাব নিয়ে ছেলেবেলা থেকে একটা অদ্ভুত আকর্ষণ আছে! একটা কারণ নেই, কারণ বহুবিধ। আগেই বলেছি, কলকাতা থেকে ২৩০ কিমি দূরে একটা ছোট্ট শহরে আমার জন্ম। নরেন্দ্র পুর এ ক্লাস ফাইভ এ যখন পড়তে গেছি, কলকাতার বন্ধুরা গ্রাম বললে খুব রেগে যেতাম! থাম তো! কতদিনের পুরানো শহর জানিস? নবাব দের আমলে অবিভক্ত বাংলার রাজধানী আমার বাড়ি থেকে ১১ কিমি দূরে। রাজধানীর পাশে, বাণিজ্যের এলাকা ওটা। শহর জুড়ে অনেক পুরনো পুরনো জমিদার বাড়ি। গঙ্গা, আমরা বলি ভাগীরথী, উত্তর ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যের প্রধান পথ। তখন কলকাতা কোথায়? স্কুলের পর প্রথম যখন গড়িয়া তে বাসা ভাড়া করলাম, এক কামড়া ঘর, রান্নাঘর আর ডাইনিং। বাড়ির মালিক বাঙাল, পুরো পাড়াটাই তাই। দেশ ভাগের পর উদ্বাস্তু হয়ে এসে, প্রায় বলা যায়, জঙ্গল পরিষ্কার করে আসতে আসতে ঘর বাড়ি বানিয়েছেন। আমরা ইতিহাসের খেয়ালে এদেশেই পড়েছি। তখন মনে হত, ইংরেজ যদি ভারতে না আসতো, তাহলে আমার বন্ধুদের আমার জন্মস্থানের আসে পাশে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতে হত!

আমার বড়-বাবা ( ঠাকুমার বাবা) মন্মথ নাথ সাহা সেই সব পুরনো জমিদারদের একজন। ঠাকুমা একমাত্র মেয়ে। পুরনো গল্পের বই এ ঠিক যেমন থাকে, জমিদার এর একমাত্র মেয়ের বিয়ে হয় কোনো উকিলবাবুর সাথে, তিনি ঘর জামাই হয়ে এস্টেট দেখাশোনা করেন, এখানেও ঠিক তাই। ঠাকুরদা উকিলমশাই। খুব কম বয়সে মারা যান, আমার বাবা তখন খুবই ছোট।
বাবার গল্পে, বড়-বাবা পিতৃ সম। আমিও দাদুই বলি। দাদুর ছিল রেশমের ব্যবসা। তখন ওখানকার মসলিন খুব বিখ্যাত, ছুঁচ দিয়ে গলে যায় নাকি একটা কাপড়। ব্যবসা থেকে জমিদারি। জমি শহরের বাইরে। জমিদাররা শহরে থাকতেন, জমিদারি ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকত নানা জায়গায়।
একটা প্রকান্ড বাড়িতে বাবা, দুই জেঠু, আর ঠাকুমা। মোটামুটি তিনটে পরিবার একসাথে। বাড়ির সামনে একই আকারের আরেকটা প্রকান্ড বাড়ি। একতলা থেকে তিনতলা অব্দি পিলার উঠে গেছে, দোতলার চারিদিকে খিলানের মত বারান্দা। ওটার নাম কাছারি বাড়ি। ওখানে খাজনা জমা পড়ত। আর বছরে একবার বিরাট করে কার্তিক পূজা হত।
শহরটা একটা মিনি ইন্ডিয়া। নবাবী আমলের বাণিজ্য স্থান। জৈন্য শিখ মারোয়ারি সব রকম মানুষ আছেন শত শত বছর ধরে, তাদের নানাবিধ ব্যবসা। আমরা বলি, জৈন্য এর দোকান, পাঞ্জাবির দোকান ইত্যাদি ইত্যাদি।
দাদু জমিদার, তাই তার বন্ধু বান্ধব আত্মীয় স্বজনের মধ্যে অনেক জমিদার। সারা শহর জুড়ে তাদের বানানো মন্দির, রাধা কৃষ্ণের, দুর্গার। তাদের মধ্যে যারা সব থেকে বড়, তাদের উপাধি রাজা। তারা বেশ কিছু স্কুল কলেজ ও বানিয়েছেন। কাছারি বাড়ির অনেক কটা গল্পের মধ্যে সেরা গল্প, ওখানে নেতাজী এসে থেকেছেন এক রাত।
যখন নরেন্দ্রপুর এ এসে ভর্তি হলাম, আমি একটু অন্যদের থেকে ছোটখাটো। একদম শোষিত নিপীড়িত প্রজাতি তে ছিলাম প্রথম বছরটা। কারণ ওই যে, নার্সারি স্কুল ইংলিশ মিডিয়াম, কম বয়সে ভর্তি হয়েছি স্কুল এ। যখন নিজের শহরের গল্প করতাম, স্বাভাবিক সবাই হাসতো! একদিন সম্ভবত ইতিহাস ক্লাস এ জমিদার নিয়ে জিগ্গেস করা হলো, কারো বাড়িতে কেও ছিলেন কিনা। উনি স্বল্পমেয়াদি শিক্ষ্ক ছিলেন, কিছু বাছাই করা ক্লাস নিতেন। (আমাদের টিচার স্টুডেন্ট রেশিও ১:২৫, এক সাবজেক্ট মাল্টিপল টিচার পড়াতেন)। ওনার নাম মনে নেই, বন্ধুরা নিশ্চয় মনে করিয়ে দেবে (স্মৃতির অভাবে জুলফি বাবু বলছি।) যেটা মনে আছে, জুলফি ধরে টানা। প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারলে জুলফি টান, ক্লাসে কথা বললে টান। আমি হামেশাই সেই টান খেতাম। সেদিন সাহস করে হাত তুলে বললাম, আর যথারীতি এক বন্ধু হাহা করে হাসলো! আমি রেডি জুলফি-টান খেতে এবার, দেখি উনি প্রবল রেগে যে হাসলো তাকে বকে দিলেন, সঙ্গে জুলফি-টান। ইয়ার্কি হচ্ছে জমিদার নিয়ে, জানো জমিদার কি জিনিস!! সেই প্রথম একটা সিচুয়েশন এ মার টা আমি না খেয়ে অন্য কেও খেল!
যাইহোক, আমার মিনি ইন্ডিয়া তে সব ধর্মের মন্দির আছে, পাঞ্জাবি শিখ এবং গুরুদুয়ারাও।
দ্বিতীয় কারণ দেশ ভাগের গল্প এবং ইতিহাস। ট্রেন এ করে ইন্ডিয়া আসার গল্প, স্বাধীনতা সংগ্রাম, শিখ সাম্রাজ্য, সবুজ বিপ্লব, ইতিহাসের পরতে পরতে পাঞ্জাব।
তৃতীয় কারণ, সিমরান! ওই যে সর্ষে ক্ষেত, সিমরান মানে কাজলের দৌড়ে আসা! বিস্তৃত আখের ক্ষেত। কলেজ এ আমার একমাত্র পাঞ্জাবি বান্ধবীকে বার বার বলতাম, তোর বিয়েতে নেমন্তন্ন করিস, আমি পাঞ্জাব যাব!
সেই পাঞ্জাব পৌঁছে গেলাম চালিয়ে চালিয়ে! সারা পাঞ্জাব জুড়ে গাড়িতে প্রায় লুপে 'আজাদী' শুনতে শুনতে! পাঞ্জাব মানে আমার কাছে স্বাধীনতা! এই স্বাধীনতা সব ধরনের শোষন বঞ্চনার থেকে, এই স্বাধীনতা মুঘলের থেকে, ইংরেজের থেকে, হীরক রাজার থেকে, বিদেশি শত্রুর থেকে, দারিদ্রের থেকে!
গ্রামে থেকে চাষ করে ভালো থাকা যায়, পাঞ্জাব দেখিয়েছে। আমিও কোন একদিন চাষী হতে চেয়েছিলাম, হবো হয়তো কোনো একদিন।
পাঞ্জাবের মধ্যে দিয়ে গিয়েও আমরা পাঞ্জাবে থেকেছি খুব কম, কারণ তখন প্রায় সেকেন্ড ওয়েভ শুরু হয়ে গেছে। কাশ্মীর থেকে ফেরার পথে অমৃতসর স্বর্ণ মন্দির টাও সেই কারণে যাওয়া হয় নি।
কিন্তু সারাটা পথ স্বাধীনতার গান আর কৃষক আন্দোলনের ট্রাক্টরের সঙ্গে গাড়ি চালানো! মনে হচ্ছিল একটা ঐতিহাসিক মুহূর্তের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি! এতো অর্গানাইজড আন্দোলন কোনোদিন দেখি নি! শেখার আছে অনেক কিছু!! গ্রাম থেকে ট্রাক্টর, গাড়ি ভরে দিল্লি যাচ্ছে, প্রতিটা গাড়িতে ফ্ল্যাগ লাগানো! প্রত্যেকটা টোল গেটে টোল নেওয়া বন্ধ, কোনো টোলই নেই। টোল গেট এর পাশে জলসত্র আর খাবারের ব্যবস্থা। গাড়ি থামাও, সবাই খাওয়া দাওয়া করে নাও। মার্সিডিজ এর ডিকি খুলে খিচুড়ি আর জল খাওয়াচ্ছেন, সম্পন্ন পাঞ্জাবি। আন্দোলনে এটাই তাদের সেবা! পেট্রোল পাম্প ঠিক করা আছে, তেল ভরে নাও, বিলিং এর ব্যবস্থা করা।
দিল্লী গিয়ে ওনাদের সাথে একদিন বসতে চেয়েছিলাম। ঠিক যে কারনে অমৃতসর থাকার রিস্ক নিইনি, সেই কারণে দিল্লী ঢুকি নি!
বড় ভয়, ভয়ে লিখি না। চাকরি করে খেতে হয়। বেশি লিখে ফেললে কে জানে ভবিষ্যতে কোথায় কি ধরনের প্রতিক্রিয়ার শিকার হব!
যখন থাকতে পারি না, টুক করে রাতে লিখে আবার ডিলিট মেরে দিই! কেও পড়বে বলে লিখি না, নিজের শান্তির জন্য লিখি। আমি স্বাধীন নই, পাতি বুর্জোয়া, বড় বুর্জোয়াদের আরো বড় করে তুলি! ফারহানের মত সব ছেড়ে ক্যামেরা বা কলম ধরে কাটিয়ে দিতে পারি না, ক্যামেরা কলম দুই-ই ছেড়ে আমায় এক্সেল আর পাওয়ার পয়েন্ট খুলতে হয়। কিন্তু এখন ভয়টা একটু কমেছে! ওই যে বললাম, প্যান-ডেমিক এপিফ্যানি! Video Link: https://www.facebook.com/avradip.saha/videos/205959981684418
নোট: ভিডিওটি সৃজনীর তোলা, আমার পাশে বসে পাঞ্জাবে। আমরা সব দায়িত্ব ভাগ করে নিয়েছি। যেমন ঘর ঝাঁট আমার, মোছা ওর; বিছানা ঝাড়া আমার, ওয়াশিং মেশিন ওর; ইলেকট্রনিকস অর্ডার আমার, সুইগি ওর; পুঁজিবাদ আমার, সমাজ আর বিপ্লব ওর!

#গল্প২ #3idiots

 #গল্প২ #3idiots

থ্রি ইডিয়টস্ সিনেমাটা যখন দেখলাম খুব অবাক হয়ে গেলাম! একি রে বাবা! ফারহান খুরেশীর গল্পটা তো আমার কপি!
ছোট থেকেই পড়ার বই ছাড়া বাকি সব কিছু পড়তে ভালোবাসি! গল্প পড়ব বলে একচুয়ালি পড়তে শিখেছি, মায়ের কাছে হাত-পাখার মারের ভয়ে না!
মার যদিও অনেক খেয়েছি, সেটা অন্য গল্প!
তখন একটা কো-এড ইংলিশ মিডিয়াম প্রাইমারি স্কুল এ পড়ি।
ক্লাস ফোর এর আগে বাবার রবীন্দ্র রচনাবলী পুরো কমপ্লিট করেছি! ঠাকুমার শরত রচনাবলী লুকিয়ে পড়তে হত, ওগুলো নাকি বড়দের বই!
দাদাদের পুরনো কমিকস, আনন্দমেলা তো কথাই নেই! সব গোগ্রাসে শেষ!
বাড়ির দুই তিন প্রজন্মের সব বই শেষ করে অবশেষে লাইব্রেরী কার্ড করে নিলাম। বঙ্কিম চন্দ্র শেষ হয়ে গেলো চটপট!
-প্রাইমারী স্কুল শেষ হতে চললো।
স্কুল-এর সব থেকে বন্ধু, আর ছোটবেলার খেলার সঙ্গী বলতে মনীষা, তান্নি, প্রিন্স, গৌরব।
খুব মন খারাপ। ছাদে বসে আছি বাবার সঙ্গে। রোজ সন্ধ্যা বেলায় যেমন বসি। হাজার হাজার প্রশ্ন করি, বাবা উত্তর দিতে থাকেন, যেমন গ্যালাক্সি, তারাদের সাইজ, সূর্যের তেজ, ইত্যাদি ইত্যাদি।
সেদিন বললাম, আমার বন্ধুরা যেখানে পড়বে আমি সেখানে পড়ব।
তা তো হয় না!
মনীষা, তান্নি; গার্লস স্কুল এ ভর্তি হবে। আমরা বয়েজ স্কুল এ।
প্রাইমারী এর পর আমার ছোট্ট শহরে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলই নেই।
বন্ধুদের সঙ্গে পড়া হবে না যখন, তখন আর কোথায় পড়ব কি যায় আসে। জিজ্ঞেস করলাম, সব থেকে ভালো স্কুল কি?
বাবা বললো, দুন স্কুল খুব নাম করা, রাজীব গান্ধী পড়েছে!
আমি বললাম, তাহলে ওখানেই পড়ি! বাবা হাসলো! ওখানে মন্ত্রী-সান্ত্রির ছেলেরা পড়ে। তারপর গল্প শোনালো, কোনো একদিন ট্রেনিং এ গেছিলেন, সেখানে থরে থরে খাবার সাজানো থাকে বুফে সিস্টেম এ!
বুঝলাম, ওটা ইয়া-ইয়া বড়লোকদের স্কুল!
আমার দ্বিতীয় প্রশ্ন, তাহলে আমি পড়তে পারি এমন রাজ্যের সব থেকে ভালো স্কুল কি? বাবা বললো, নরেন্দ্রপুর - পুরুলিয়া - রহড়া।
তাহলে আমি ওখানেই পড়ব!
ফাইনাল!
বাবা হেসে ফেললো, ওখানে অ্যাডমিশন টেস্ট দিতে হয়। তখন দুই-তিন মাস বাকি। দাদা ক্লাস এইট্ থেকে রহড়া তে পড়ে।
দাদা পড়েছিল এক স্যারের কাছে, লম্বা দাড়ি, কালীদাস বাবু!
কালীদাস বাবু ২ ঘণ্টা ট্রেন জার্নি করে আমাদের ছোট্ট শহরে এসে, শুধু আমাকে পড়াতেন। বাবার বন্ধু, দাদাকে পড়িয়েছেন, সেই সূত্রে। মূলত হলস্ এর বই থেকে অঙ্ক করাতেন। আর নানান রকম ইংলিশ লিখতে দিতেন।
কালীদাস বাবু কি পড়িয়েছেন তার থেকেও বেশি আমার মনে আছে, উনি দুটো ডিম সেদ্ধ খেতেন আর ডিমের কুসুম ওনার দেড়-হাত লম্বা দাড়িতে লেগে যেত!
নরেন্দ্রপুর-এ পরীক্ষা দিতে প্রথমবার কলকাতা এলাম! শিয়ালদা স্টেশন্ এ সজোড়ে বাবার হাত ধরে ছিলাম, ছাড়লেই হারিয়ে যাবো! টালিগঞ্জে এক দূর সম্পর্কের দাদুর বাড়িতে উঠলাম। রাতে, "গুপী গায়েন বাঘা বায়েন", টিভিতে, রাত একটা অব্দি সিনেমা দেখে পরদিন পরীক্ষা দিলাম। বাবা বারণ করেন নি, কোনোদিন আমাকে কেও পড়তে বলতো না। আর এই পরীক্ষা তো নেহাতই খেলা, ছেলের সখ মেটানো গোছের!
বাড়িতে কেও ভাবে নি আমি নরেন্দ্রপুর এ চান্স পাবো। ৬-৭ ঘণ্টার ট্রেন জার্নি। গিয়ে রেজাল্ট দেখতেও বাবাকে সারাদিন ট্রেন এ করে যেতে-আসতে হবে। আরেকজন চেনা পরিচিত উকিলবাবু গেছিলেন, বাবা তাকে বলে দিলেন দেখে আসতে। ওনার ছেলেও দিয়েছিল পরীক্ষাটা। উনি এসে জানালেন, "দেখলাম না।"
বেশ কিছুদিন অপেক্ষা করে, বাবার মনে হলো, নিজে গিয়ে একবার দেখে আসি। ভোর চারটের ট্রেন এ বেড়িয়ে রাত ১১টায় ফিরলেন বাবা।
হাতে মিষ্টির প্যাকেট! আমি দোতলার ব্যালকনি তে দাঁড়িয়ে। বাবা চিৎকার করছেন, "এক্ষুনি প্যাকিং করতে হবে। কাল ভর্তির লাস্ট ডেট!"
আবার আমাদের ভোর চারটের ট্রেন ধরতে হবে!
"A" দিয়ে নাম, আমার নাম একদম লিস্ট এর উপরের দিকেই ছিল। দূর থেকে দেখা যাচ্ছে সবার মাথা ছাড়িয়ে।
অথচ উকিলবাবু বেমালুম মিথ্যা কথা বলেছিলেন আমার বাবাকে।
ওনার বাড়ির মাঠে আমি ফুটবল খেলতাম, ওনার ছেলের সাথে আমি ক্লাব বানিয়েছিলাম, নাম দিয়েছিলাম "সবুজ সংঘ"।
শেষ দিন, হ্যাঁ, এক্কেবারে শেষ দিনে গিয়ে আমি ভর্তি হলাম!
সারারাত না ঘুমিয়ে, ৬-৭ ঘণ্টা ট্রেন জার্নি করে।
১০ বছর বয়স, ক্লাস ফাইভ। গোটা রাজ্যে এর থেকে বড় ক্যাম্পাস, বোধহয় সব মিলিয়েও খুব কম আছে।
শুরু হলো নতুন অধ্যায়। আর একটু একটু করে ঢুকে পড়লাম আমি ফারহান খুরেশীর জীবনে!
মনীষার সাথে আমার আর কোনোদিন দেখা হয় নি। তান্নি কে একবার দেখেছি; প্রিন্স, গৌরব-কেও বার কয়েক। ফেসবুক জীবনে আসার পর মনীষা আর তান্নি কে অনেক খুঁজেছি, খুঁজে পাই নি।
ক্রমশ...

#গল্প১ #pandemicepiphany

#গল্প১ #pandemicepiphany

ঠিক যেমনটা আমার হয়েছে, সেটা এক্সপ্রেস করার জন্য আজ একটা নতুন শব্দ শিখলাম! প্যান্ডেমিক এপিফ্যানি!
একদম এরকমই তো ভেবেছিলাম, তার জন্য শব্দ আছে যখন, আমার মত অনেকেই ভেবেছেন! একা নই, একা নই মোটে!
২০২০ এর লক ডাউন থেকে ২০২১ ফেব্রুয়ারি- মার্চ, এক বছর গোটা পৃথিবীতে অনেক কিছু ঘটে গেছে। সত্যি বলতে যা ঘটছে, তা নিয়ে ভাবনার অবকাশ খুব কমই পেয়েছি! কারণ কাজ। সকাল থেকে রাত অব্দি আমি শুধু কাজ নিয়ে ভেবেছি। কি কাজ বলতে গেলে আরেকটা গল্প, বা উপন্যাস হয়ে যাবে। একটু একটু করে বলব। এখন আসি এপিফ্যানি তে!
এই সময়, মোটামুটি ১৮-১৯ দিন টানা অফিস করি, রোববার এবং পাবলিক হলিডে সমেত। কোনো পেশায় একমাত্র যুদ্ধ চলাকালীন সৈন্য-সামন্ত ছাড়া আর কেউ এমন দানবীয় কাজ করে বলে আমার জানা নেই!
একদিন ফোন ঘেঁটে দেখলাম, আমার সারা ফোন জুড়ে কম করে হলেও ১০-১৫ জন মানুষের নম্বর আছে, যাদের আমি বিগত এক বছরে মিট করেছি, যারা অত্যন্ত প্রতিষ্ঠিত জীবনে, অথচ গত এক বছরে অকালে চলে গেছেন।
এক মুহুর্ত থমকে গেলাম! কিসের কাজ, কিসের ভবিষ্যত পরিকল্পনা, কিসের সাফল্য, কিসের পাওয়ার, কিসের ফিনান্সিয়াল ইন্ডেপেনডেন্স!
আমি কি জানি পাঁচ বছর পর দূরের কথা, পাঁচ দিন বাদে বেঁচে থাকবো কিনা?
যা করতে চাই, এখুনি করতে হবে! লিভ ইন দ মোমেন্ট!
একটা দানবীয় কাজ শেষ করে আরেকটায় হাত ছোঁয়ানোর আগে, জানিয়ে দিলাম, আর না!
১০ দিনের মাথায় মালপত্র তুলে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম। কলকাতা থেকে বারাণসী, বারাণসী থেকে লখনউ, লখনউ থেকে আগ্রা হয়ে ঢুকে পড়লাম কাশ্মীর!
যখন বেড়িয়েছি, জানি না কতটা গাড়ি চালাতে পারব! ঠিক করেছিলাম, যতটা পারব চালাবো, তারপর ফিরবো। সঙ্গে পরিবারের আরো তিনজনের মধ্যে দুজন অল্প স্বল্প চালাতে পারেন শহরের মধ্যে। কিন্তু হাইওয়ে আর পাহাড়ে, স্টিয়ারিং ছাড়ার প্রশ্নই ওঠে না।
চালিয়ে গেছি, এক এক করে সব কটা টার্গেট কমপ্লিট করে পুরো কাশ্মীর ঘুরে ঠিক পরিকল্পনা মাফিক বাড়ি ও ফিরেছি, ৫৫০০ কিমি র পরে!
রাস্তার একটা আলাদা মজা আছে। যারা কোনোদিন রোড ট্রিপ করেন নি, শুধু ফ্লাইটে ঘুরেছেন, বুঝবেন না!
একটার পর একটা রাজ্য, আমার দেশ দেখা, মানুষ দেখা। পাঞ্জাব এ সর্ষে ক্ষেতের পাশ দিয়ে , কৃষক বিদ্রোহে সামিল হতে যাওয়া ট্রাক্টর চাপা মানুষের সঙ্গে গাড়ি চালানো। কাশ্মীর এ ডাল লেকের পাশে পাশে গোল গোল করে ঘোরা, সঙ্গে ফুল ভলুমে বন্দেমাতরম বাজানো!
রাস্তায় কতবার ওয়েস্ট বেঙ্গল রেজিস্ট্রেশন দেখে লোকে এসে এসে কথা বলেছেন, কতজনের কত রকম সম্পর্ক রয়েছে কলকাতার সঙ্গে, বাংলার সঙ্গে!
কাশ্মীর এ শঙ্করাচার্য্য মন্দিরের সামনে আর্মির জওয়ান আমাকে শিখিয়েছেন কিভাবে খাদের দিকে ব্যাক এ না গিয়ে গাড়ি টার্ন নিতে হয়! লখনউ তে ইমাম এসে ঘুরিয়ে সব দেখিয়েছেন, তার হিসেবে আল্লাহ গড ভগবান সব একেকটা নাম, ঠিক যেমনটা রামকৃষ্ণ দেব বলতেন। আবার হজরতবাল এ হিন্দু শুনে অবাক হয়ে গেছেন গোঁড়া কেউ। অনেক কড়া কড়া প্রশ্ন করেও আমি একটুও রাগ করছি না দেখে অবশেষে মেনে নিয়েছেন আমারও যোগ্যতা আছে ওখানে যাওয়ার!
আমার দেশ যে কি বিপুল, বিশাল, বৈচিত্র্যময়তায় ভরা, রাস্তায় না বেরোলে তার কিচ্ছুটি বোঝা যায় না!
ক্রমশ:...
ভিডিওটি শ্রীনগর থেকে পাহেলগাম যাওয়ার পথে, ১১ই মার্চ, ২০২১ এ তোলা Link: https://www.facebook.com/avradip.saha/videos/417136023344742